লাস্ট বাট নট লিস্ট

এখন থেকে সাধারণ নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, অ্যাজমা বা করোনা ভাইরাস ব্যতীত অন্যান্য রেস্পিরেটরি ডিসট্রেসের পেশেন্ট বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে শুরু করবে। বিশেষ করে ঢাকা বাদে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে। সম্ভবত ঢাকাতেও। কারণ-

এক, বৈশ্বিক করোনা আক্রমণের প্রায় দুই মাস হওয়ার পরেও সরকার দেশের ডাক্তারদের করোনা প্রটেক্টিভ কিট সরবরাহ করেনি। ডাক্তার-নার্স সহ চিকিৎসা সেবা দেওয়া ব্যক্তিদের এখন পর্যন্ত সম্বল নিজেদের টাকায় কেনা মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার! একজন চিকিৎসা কর্মীর পক্ষে তার এবং তার পরিবারের জীবনের ঝুকি নিয়ে কিভাবে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব? এই টাইপের রেস্পিরেটরি ডিসট্রেসের পেশেন্ট করোনা মনে করে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে রেফার হতেই থাকবে। কেউ ভর্তি নিতে বা চিকিৎসা দিতে যেতে সাহস দেখাবে না। সেটাই স্বাভাবিক। এবং একসময় অক্সিজেন বা ভেন্টিলেটরি সাপোর্ট ছাড়া ওই রোগী করোনাতে না ভুগেই মারা যাবে।

দুই, দেশে খুবই কম আইসিইউ সাপোর্ট অ্যাভেলেবল। তার মাঝে বেশিরভাগেরই পর্যাপ্ত সাপোর্ট না থাকার পরেও তারা আইসিইউ অ্যাভেলেবল বলে দাবী করে! আদতে প্রোপার আইসিইউ সাপোর্ট দেশে খুবই নগণ্য। সেটাও দেশের অনেক জেলা শহরেই নেই। এখন, ইতালির মত দেশেই ৮০ বছরের বেশি বয়স্কদের আইসিইউ সাপোর্ট প্রোভাইড করতে পারছে না, মেজর আউট ব্রেক হলে এদেশে কী হবে সহজে অনুমানযোগ্য। এখন করোনায় শুধু আইসিইউ হলেই হবে না, আইসোলেটেড আইসিইউ এর ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে ওই আইসিইউ এর বাকিদের মাঝেও করোনা ছড়াবে। এখন বলেন, আজকে সাধারণ নিউমোনিয়া বা ব্রংকাইটিস নিয়ে আমার, আপনার বা একটা বাচ্চার আইসিইউ প্রয়োজন পড়লো। দেশের কোন হাসপাতাল সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে ঝুঁকি নিয়ে আমাকে, আপনাকে ভর্তি নেবে?

তিন, ঢাকার বাইরে স্রেফ করোনা টেস্ট করার উপায়ই নেই। এর জন্যে বায়োসেফটি লেভেল টু বা থ্রি ল্যাব, কেবিনেট, ভাইরোলজিস্ট, প্রোটেক্টিভ কিট, ট্রেইনড পার্সন, ইকুইপমেন্ট, অ্যানালাইজার, করোনা টেস্টিং কিট- অনেক, অনেক কিছুর প্রয়োজন পড়ে। যেগুলোর ব্যবস্থা গ্রহণে সরকার পদক্ষেপই নেয়নি ধরতে গেলে। একশ’ বিশ কোটি মানুষের জন্যে পাশের দেশ ভারত ইতোমধ্যে ৫২ টা ল্যাব তৈরি করে ফেললেও আঠারো কোটি মানুষের জন্যে নিদেনপক্ষে আমাদের ৭-৮ টা ল্যাব রেডি করার প্রয়োজন ছিলো। সেন্টার বা পেরিফেরির যেই আক্রান্ত হোক তার একমাত্র ভরসা আইইডিসিআর। এখন আউট ব্রেক হলে প্রটেক্টিভ নীতিমালা মেনে দিনে সারা দেশের কতজনের স্যাম্পল সংগ্রহ আর রেজাল্ট প্রদানের ক্ষমতা আছে আইইডিসিআর এর? আমার ধারণা, ঢাকার বাইরে স্ক্রিনিং ব্যবস্থা না থাকায় সরকারের কাছে যে ১০ জন করোনা আক্রান্তের তথ্য আছে, মূল সংখ্যাটা তার অনেক গুন বেশি।

চার, করোনা আউট ব্রেকের পরেও সরকার দেশের ডাক্তারদের আলাদা করে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্যে ট্রনিংয়ের ব্যবস্থা করতে পারেনি। কিছু সেমিনার ছাড়া দেশের ৯৯ শতাংশের বেশি ডাক্তার কোনো ট্রেইংয়ে অংশগ্রহণ করেছে বলে আমার জানা নেই। শুধু মেডিকেলীয় ভাষায় করোনার সাইন-সিম্পটম আর টুকটাক ট্রিটমেন্ট প্রোটোকল বোঝার বাইরে একজন সাধারণ মানুষের সাথে একজন হেলথ প্রফেশনালের করোনা বিষয়ে জানাশোনার গন্ডি বেশ কাছাকাছিই। সুতরাং সাধারণ জ্বর বা রেস্পিরেটরি ডিসট্রেসের পেশেন্টদের করোনা মনে করার বাইরে অন্য চিন্তা মাথায় আসা বর্তমান প্রেক্ষিতে সম্ভব না।