সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কেনার সময় বিবেচনা করা বিষয় সমুহ
আজকের পোস্টে আলোচনা করা হবে সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কেনার সময় বিবেচনা করা বিষয় সমুহ।
পোস্টটা অনেকের ভালো নাও লাগতে পারে। কিন্তু আমার ব্যাক্তিগত এক্সপেরিএন্স থেকেই লিখলাম এবং অনেকের কাজে লাগবে বলে আমার বিশ্বাস।
অনেকেই আছেন, যারা এক গাড়ি বেশিদিন চালাতে পছন্দ করেন না। মানে সর্বোচ্চ ৩-৪ বছর চালিয়ে মডেল চেঞ্জ করেন। সেই ক্ষেত্রে অনেক ধনী না হলে বার বার নতুন গাড়ি কেনাটা বেশ চ্যালেঞ্জিং। এক্ষেত্রে সেকেন্ড হ্যাণ্ড গাড়ি কেনাটা বেশ লাভ জনক। অনেক সময় একটা সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি ভালো মত দেখে কিনতে পারলে ৩-৪ বছর পর
প্রায় সেইম দামেই বেচে দেয়া যায়, যেটা রিকন্ডিশন গাড়ি কিনে সম্ভব না। কিন্তু ঠিক মত না দেখে কিনলে, ধরা খেলে কিন্তু অর্ধেক দামও পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে বিক্রির সময়।
সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কেনার সময় কয়েকটা জিনিস খেয়াল রাখা জরূরী।
পেপারসঃ এইটা গাড়ির মেইন জিনিস। গাড়ির কাগজপত্র ঠিক ঠাক না থাকলে অনেক বিপদ। অনেক সময় অনেক গাড়ির নামে মামলাও থাকতে পারে, মালিকানা ওয়ারিশ নিয়ে ঝামেলা থাকতে পারে, নকল পেপারস ও হতে পারে। এজন্য গাড়ি যাচাই এর প্রথম কাজ হচ্ছে, বিআরটিএ তে যদি কোন পরিচিত কর্মকর্তা থাকে, তার সাথে কথা বলে গাড়ির নাম্বার দিলে ওই গাড়ির যাবতীয় ইতিহাস আপনাকে বলে দিবে। সেখানে আসল মালিক এর ফোন নাম্বার ও থাকে, মন চাইলে ফোন দিয়ে কনফার্ম হয়ে নিন।
এখন বেশির ভাগ সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি বিক্রি হয় দালাল এর মাধ্যমে। এই জন্য পেপারস নিয়ে খুব সাবধান থাকা লাগে। কিছুদিন আগেও আমার এক বন্ধু ভুয়া মালিকানা নিয়ে বিপদে পড়ছিলো সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কিনে। তাই গাড়ি কিনলে আগে কাগজপত্র চেক করে নিবেন আর পারলে গাড়ি কেনার সাথে সাথেই মালিকানা বদল করে নিবেন অবশ্যই মেইন মালিককে সাথে নিয়ে যেয়ে। দালাল দিয়ে মালিকানা বদল করলেও বিপদে পড়তে পারেন। পরে মালিকানা আউডেট হবেনা, এভাবেই পড়ে থাকবে সাইন গড়মিল এর কারনে। আর গাড়ি কেনার সময় কাগজ এর সাথে গাড়ির ইঞ্জিন নাম্বার, চ্যাসিস নাম্বার, রঙ মিলিয়ে নিবেন অবশ্যই।
এ্যাক্সিডেন্ট হিস্টিঃ এইটা গাড়ির খুব গুরুত্তপুর্ন একটা বিষয়। নরমালী দালালরা গাড়ি বিক্রির সময় সব গাড়ির ক্ষেত্রেই বলে যে গাড়ি এ্যক্সিডেন্ট মুক্ত। তাই এটা নিজেই চেক করে নিতে হবে। কোন গাড়ি যদি বড় রকম এক্সিডেন্ট করা হয়, চ্যাসিস আঘাতপ্রাপ্ত হয়, তাহলে সেই গাড়ি অনেক ঝামেলা করে যতই ঠিক করেন। কোম্পানি যেভাবে এ্যাডজাস্ট করে দিসে, অইটা আমাদের লোকাল মেকানিকরা শতভাগ করতে পারেনা। ফলে গাড়ি কাপাকাপি করে, অনেক রকম সমস্যা দেখা দেয়। আর বিক্রি করতে গেলেও কেউ কিনতে চাইবেনা যদি টের পায় গাড়ি এ্যাক্সিডেন্ট করা। এজন্য গাড়ির সামনে আর পেছনের কিছু জিনিস লক্ষ করতে হয়। প্রথমেই দেখবেন, গাড়ির বনেট উচু করে তার ওজন। যদি সেইম মডেল এর গাড়ির চাইতে ওজন বেশি মনে হয়, বুঝবেন অনেক পুডিং মেরে ঝালাই মেরে বনেট ঠিক করা। গাড়ির ইঞ্জিনের পাশের চ্যাসিস খেয়াল করবেন। দেখবেন কোন রঙ করা কিনা। যদি রঙ করা হয়, ,তাহলে বুঝবেন কোন ঝামেলা আছে, কারন চ্যাসিসে কেউ কারন ছাড়া রঙ মারেনা। আর চ্যাসিসে কিছু জাপান কর্তৃক কিছু বিট আর আঠা দেয়া থাকে যা পরে রিপেয়ার করলে আর ঠিক করা যায়না। ওইটা ও যদি শিখে নিজে দেখতে পারেন, তাহলেই বুঝতে পারবেন। আর একটা জিনিস দেখবেন নাম্বার প্লেট। নাম্বার প্লেট রঙ, রিপেয়ার করা যায়না। যার কারনে নাম্বার প্লেট যদি ফ্রেস না থাকে, দুমড়ানো মুচড়ানো হয়, তাহলে গাড়িটা আর একটু ভালো করে চেক করবেন। হেড লাইট গুলা অরিজিনাল কিনা, সামনের গ্লাস টা অরিজিনাল কিনা এগুলা চেক করবেন। বিআরটিএ কর্তৃক লাগানো স্টিকার টা ভালো করে দেখলেই বুঝবেন গাড়ির গ্লাস বদলানো কিনা।
পেছনের ব্যাকডালা তুলে কর্নার এর বিট গুলা খেয়াল করবেন, নিচের স্পেয়ার টায়ার টা তুলে তার আশে পাশের দেয়া আঠা আর বিট খেয়াল করবেন। আর সর্বোপরি গাড়ি চালিয়ে দেখেন যে কোন আজে বাজে শব্দ আসে কিনা, কোন ভাইব্রেশন হয় কিনা।
এর পর কিছু বিষয় থাকে, যেমন তেলে চলা গাড়ির মান একটু ভালো থাকে। গাড়ির ইন্টেরিয়র ফ্রেশ থাকলে গাড়ি যত্নে ছিলো বোঝা যায়। গাড়ি ভাঙ্গাচোড়ার ভেতর চালালে যদি কোন রকম শব্দ আসে, তাহলে সেইটা ঠিক করে দিতে বলবেন। কারন সেই শব্দ ১০০০ টাকার পার্টস ও হতে পারে, ২০০০০ টাকার ও হতে পারে। গাড়ির রানিং বোর্ড চেক করবেন কোন ধরনের জং ধরা আছে কিনা। গাড়ির কাগজ আপডেট আছে কিনা, না থাকলে করিয়ে তারপর গাড়ি কিনেন।
সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কেনা বেশ রিস্কি একটা কাজ। দেখে কিনতে পারলে অনেক লাভ, না বুঝে কিনলে অনেক লস। গাড়ি ঠিক মত না চিনলে সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি না কেনাই ভালো। আর দালাল যদি বলে, চলেন নাভানায় গাড়ি টেস্ট করে দিচ্ছি, তাহলে ভাই আর আগায়েন না।
তাদের সাথে আগেই কথা হয়ে থাকে। হাজার খারাপ গাড়িও তারা শতভাগ ফিট বলে হুদাই হাজার পাচ টাকা নিয়ে নিবে। খুব বেশি ক্লোজ, পরিচিত ড্রাইভার/ইঞ্জিন মেকানিক না পাইলে অল্প পরিচিত কাউকে নিবেন না। সে টাকা খেয়ে ঐ গাড়িই আপনাকে ধরিয়ে দিবে।
আর একটা কথা, গ্রুপের সাথে মিল রেখে একটা কথা বলি।
এ্যলিয়ন, প্রিমিয়ো, করোলা, এক্সিয়ো কিনলে কিন্তু অনেক ভালো রিসেল ভ্যালু পাবেন।
Collected