অন্যের জন্য ভাবো, অন্যকে দাও, জীবনও তোমার কথা ভাববে, তোমাকে আরো বহুগুণে ফিরিয়ে দেবে

যে তিনটে উপদেশ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে আজ এই পর্যায়ে আসতে সাহায্য করেছে।

একদিন রাতে বাড়ি ফিরে দেখি, বাবা আমার জন্য খাবার টেবিলে অপেক্ষা করছেন।

টেবিলে রাখা আছে রান্না করা ন্যুডলসের দুটি প্লেট।

একটা প্লেটের ওপর রাখা ছিল একটি খোসা ছাড়ানো সিদ্ধ ডিম।

অন্য প্লেটটি ছিল শুধু ন্যুডলসের, আমাকে যেকোনো একটি প্লেট বেছে নিতে বললেন বাবা।

স্বাভাবিকভাবেই আমি ডিম সমেত প্লেটটাই উঠিয়ে নিলাম।

সেইসব দিনে চীনে ডিম ছিল এক দুস্প্রাপ্য জিনিস! উৎসবের দিন ছাড়া কারো বাড়িতে ডিম খাবার কথা তখন ভাবা যেতো না।

খাওয়া শুরু করার পর, দেখা গেলো বাবার প্লেটে ন্যুডলসের তলায় লুকিয়ে রাখা আছে দুটো ডিম, ফলে আমার খুব দুঃখ লাগছিলো তখন।

মনে মনে ভাবছিলাম, কেন যে তাড়াহুড়ো করে বাছতে গেলাম?

বাবা আমাকে দেখছিলেন, খাবার শেষ করার পর মৃদু হেসে বললেন, মনে রেখো তোমার চোখ যা দেখে, সেটা সবসময় সত্যি নাও হতে পারে।

শুধু চোখে দেখে যদি মানুষ বা কোনো পরিস্থিতিকে বিচার করে সিদ্ধান্ত নাও, ঠকে যাওয়ার সম্ভবনাই বেশি।

পর দিন আমার বাবা আবারও খাবার টেবিলে ন্যুডলস ভর্তি দুটো প্লেট রেখে আমাকে খেতে ডাকলেন।

আগের দিনের মতো এবারও একটাতে ডিম আছে, আর একটাতে নেই।

আমাকে যে কোনো একটি প্লেট বেছে নিতে বলা হলো।

আমি আগের অভিজ্ঞতা থেকে জেনেছি, চোখ যা দেখে তা সত্যি নাও হতে পারে।

আমি ডিম ছাড়া প্লেটটিই বেছে নিলাম।

কিন্তু খেতে গিয়ে দেখলাম, ভেতরে কোনো ডিমই নেই! বাবা আমার দিকে তাকিয়ে আবার হাসলেন।

অভিজ্ঞতা সব সময় সঠিক পথ দেখায় না, জীবন বড় বিচিত্র।

জীবনে চলার পথে বহুবার আমাদের মরীচিকার মুখোমুখি হতে হয়, এর থেকে উত্তরণ অসম্ভব।

জীবন যেটা তোমাকে দিয়েছে, সেটা মেনে নিলে কষ্ট কম হবে।

তোমার অভিজ্ঞতা এবং বুদ্ধিমত্তা তুমি অবশ্যই কাজে লাগাবে, কিন্তু শেষ কথা জীবনই বলবে।

তৃতীয় দিন আবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি।

আগের দিনের মতই এবারেও একটাতে ডিম আছে, আর একটাতে নেই।

তবে একটা ব্যাপার এবার একটু অন্য রকম মনে হলো।

এবার আমি বাবাকে বললাম, আগে তুমি নাও, তারপর আমি।

কারণ তুমি বাড়ির সবার বড়, এই সংসার তোমার আয়ে চলে, তোমার অধিকার সবার আগে।

শুনে বাবার মুখে উজ্জ্বল হাসি ফুটে উঠলো, যদিও মুখে কিছু বললেন না।

খাওয়া শুরু করার পর, আমি দেখলাম ন্যুডলসের নীচে আমার প্লেটে দুটো ডিম।

খাবার শেষ করার পর, বাবা আমাকে কাছে ডাকলেন।

সস্নেহে আমার হাত ধরে বললেন, মনে রেখো, কৃতজ্ঞতা এবং ঋণ স্বীকার করা মানুষের শ্রেষ্ঠ ধর্ম।

তুমি জীবনে যদি অন্যের জন্য ভাবো, অন্যকে দাও, জীবনও তোমার কথা ভাববে, তোমাকে আরো বহুগুণে ফিরিয়ে দেবে।

আমাদের সকলের জীবনে বাবা-মা প্রধান এবং প্রথম শিক্ষক, বাবা-মার উপদেশ পালন করে কেউ কখনো ঠকেনি, ঠকবে না।

কারণ, কোন বাবা-মা সন্তানের অমঙ্গল কামনা করেন না। ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল বাবা মা।
……
(অযাচিত কপির কারণে লেখকের নাম হারিয়ে গেছে)