বাচ্চাদের মেধাশক্তি কিভাবে বাড়াবেন ?

বাচ্চাদের মেধাশক্তি কিভাবে বাড়াবেন ?

  • ডাঃ মুহাম্মাদ জাহাঙ্গির কবির
    .
    আসসালামু আলাইকুম,
    আমার কাছে এমন অনেক বাবা মা আসে যারা নিজেদের বাচ্চার জন্য এমন ওষুধ চাইতে আসে যাতে তাঁর বাচ্চার মেধাশক্তি বৃদ্ধি হয় এবং পড়াশুনায় ভালো করতে পারে। আমাকে বলে এমন একটা ওষুধ দেন ডাক্তার সাহেব যাতে আমার বাচ্চা ওষুধ টা খেয়ে ব্রেইনের মেধা বেড়ে যায়। আসলে এটা কোনদিন সম্ভব না আর এমন ওষুধ নেই । তাহলে তো সবাই এই ওষুধ খেয়ে ভালো ব্রেইনের অধিকারি হয়ে যেতো। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে আমাদের সবার আগে এইটা মনে রাখতে হবে যে বাচ্চাদের শরিরে যেই টক্সিক বা বিষ ঢুকছে খাবারের মাধ্যমে সেটা বন্ধ করতে হবে। আর সেগুলা হচ্ছে চিনি জাতীয় সব খাবার যেমন, কোক, ফান্টা, পেপসি, চকলেট, কেক, আইসক্রিম টাইপের যত খাবার আছে যেগুলাতে প্রচুর চিনি দেওয়ায় থাকে এগুলা খাওয়া বন্ধ করতে হবে। এই রকমের সকল খাবার যেগুলা প্রসেসড করে রাখা হয়, প্যাকেটে করে বিক্রি হয়। এই মৃত খাবারগুলাতে মেডিসিন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়। আর এই খাবার গুলো বাচ্চাদের জন্য এবং বড়দের জন্য খাওয়া বন্ধ করতে হবে। এর মাধ্যমে আপনার শরীরে বিষ প্রবেশ করাচ্ছেন।
    .
    এর পরিবর্তে আমরা বাচ্চাদের ভালো নেচারাল খাবার খেতে দিবো। আমরা তাদের জন্য ভালো চর্বি খেতে দিতে পারি। যেমন, নারিকেলের তেল, মাখন, ঘি, বাদাম, ডিম কুসুম সহ ইত্যাদি। আমাদের ব্রেইন কিন্তু চর্বির তৈরি আর আমরা ভালো চর্বি খেলে আমাদের ব্রেইন ভালো হয়। আমাদের ব্রেইনে কিন্তু সবকিছু ঢুকতে পারে না। । এটাকে blood brain barrier বলে। এটার ভিতরে ঢুকতে পারে হচ্ছে নারিকেল তেল। আমরা ঘরে বানানো নারিকেল তেল বাচ্চাদের খাওয়ানোর চেষ্টা করবো। আর নাহয় organic extra virgin coconut oil (অর্গানিক এক্সট্রা ভার্জিন কোকোনাট ওয়েল) খাওয়ানোর চেষ্টা করবো। এবং organic extra virgin olive oil বাচ্চাদের খাওয়ানোর চেষ্টা করবো। এটা বাচ্চাদের ব্রেইন ডেভোলাপ করার জন্য অনেক ভালো। আর non inflammatory (নন-ইনফ্লাইমেটরি) খাবার যেমন, সয়াবিন তেল, রাইস ওয়েল, কেনোলা ওয়েল, সানফ্লাওয়ার অয়েল এগ্লা হচ্ছে ইনফ্লাইমেটরি খাবার। এগুলা ইনফ্লাম বা প্রদাহ করে। তো এই খাবারগুলা বাচ্চাদের জন্য ভালো না। এটা ব্রেইন ডেভোলাপমেন্টের জন্য ভালো না।
    .
    এরপর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেটা যে ব্যায়াম করতে হবে।
    আমাদের ব্রেইনের ভিতর যেই নার্ভগুলো নতুন নতুন তৈরি হয় সেগুলা ব্যায়াম করলে তৈরি হয়। বাচ্চারা যদি খেলাধুলা করে তাহলে এটা তৈরি হয়। বাচ্চারা যখন নাচানাচি করে তখন সেটা ব্রেইনের জন্য অনেক ভালো । কারন এতে তাদের ব্রেইনের কর্টেক্সগুলো ঘন হয় বা পুরু হয়। আর যখন বাচ্চারা দৌড়াদৌড়ি করে তখন ব্রেইনে BDNF নিষ্কৃত হয়। এইটা হচ্ছে ব্রেইনের ফার্টিলাইজার বা সার হিসেবে কাজ করে। ব্যায়াম করলে BDNF বেশী রিলিজ হয়। আর BDNF বেশী রিলিজ হলে বাচ্চাদের ব্রেইনের স্মৃতিশক্তির যেই সেন্সটা সেটা বেশী তৈরি হয় হচ্ছে ব্যায়াম করলে।
    .
    ব্যায়াম করলে এমন কয়েকটা হরমোন নিষ্কৃত হয় । এমন অনেক নিউরোট্রান্সমিটার নিষ্কৃত হয় যেমন, ডোপামিন, সেরোটোনিন,নোরেপিনেফ্রিন ইত্যাদি। এই নামগুলো আপনাদের জন্য কঠিন তারপরেও বলে রাখলাম কারন অনেক ডাক্তার বন্ধু আমার ভিডিও দেখে। এটা বাচ্চাদের জন্য এন্টি ড্রিপ্রেশন হিসেবে কাজ করে। আমরা যারা ডিপ্রেশনের রোগীর চিকিৎসা করি তাদের কিন্তু এই ওষুধগুলা দেওয়া হয়। ওষুধ কিন্তু আমাদের একটা কেমিকেল সোর্স থেকে আসে কিন্তু ব্যায়াম করলে কিন্তু আমাদের শরীরে ও ব্রেইনে নিজে নিজেই এই নিউরো ট্রান্সমিটারগুলো তৈরি হচ্ছে। এগুলা তাদেরকে উৎফুল্ল রাখতে সয়াহতা করে। অনেক বাচ্চা দেখবেন যে পড়ার চাপে এবং আজেবাজে খাবার খাওয়ার ফলে তাঁর বদহজম আর সে বার বার অসুস্থ হচ্ছে। তাঁর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। আর শারীরিক ব্যায়াম না করার ফলে তাঁর খেলাধুলা করার ক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে। তো এই সবগুলা বিষয় কিন্তু একটার সাথে একটা প্রাসঙ্গিক। তাঁর ফিজিকাল এক্টিভিটিজ কিন্তু তাঁর মানসিক সুস্থতা থাকতে সয়াহতা করে। আবার সে যদি মানসিক উৎফুল্ল থাকে তাহলে ফিজিকাল এক্টিভিটিগুলো করতে তাকে সয়াহতা করে। আর ব্যায়াম করলে ব্রেইনে প্রচুর পরিমান অক্সিজেন যায় এবং এটা ব্রেইনকে ডেভলাপ করতে সয়াহতা করে।
    .
    এমন অনেকগুলা বিষয় আছে এবং এগুলাতে অনেক গবেষণা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে যারা ফিজিকাল এক্টিভিটিজগুলা করেছে তারা অনেক ভালো রেজাল্ট করেছে। আর শিক্ষকদের বলবো আপনারা বাচ্চাদের ব্যায়াম ও খেলাধুলার প্রতি নজর দিন এবং আনন্দের সাথে মজা করে তাদেরকে পড়াশুনার শিক্ষা দিন। বাচ্চাদের যদি একটি হ্যাপি ব্রেইন দেন তাহলে সেই ব্রেইনটা বেশী শিখতে পারে। তাদেরকে পড়াশুনা এমনভাবে করান যাতে সে মজা পেয়ে পড়াশুনা করে। শিক্ষক এবং বাবা মা সবাইকে উচিৎ বাচ্চাদের ফান করে খেলার ছলে তাদেরকে পড়াশুনা শিক্ষা দিন । এটা তাদের জন্য অনেক ভালো ফলাফল দিবে। আশা করি এরপর আর কোন ওষুধ চাইবেন না আর যেই উপদেশগুলো দিলাম সেটাই পালন করার চেষ্টা করুন। আর একটু আগে ঘুমাতে যাওয়া ও সকালে ভোরে উঠে একটু হাটাহাটি দৌড়াদৌড়ি খেলাধুলা করতে দিবেন। এতে বাচ্চারা সুস্থ থাকবে। আমরা এগুলা মেনে চললে আমাদের বাচ্চারা হাসিখুশি, সুস্থ , ভালো ব্রেইনের বাচ্চা হবে। আর আমরা চাই আমাদের বাচ্চাগুলা যাতে এমন হয়।
    .
    আল্লাহ্‌ হাফেজ, আল্লাহ্‌ সবাইকে ভালো ও সুস্থ রাখুন। আমীন। পোস্টটি শেয়ার করে সবাইকে জানতে সুযোগ দিন এবং কমেন্টে ভিডিও দেওয়া আছে বেশী বেশী শেয়ার করুন।
    ©