বই পড়ার সুবিধাসমূহ
১] বই পড়ার ফলে অনেকটা অবচেতন ভাবেই আপনার ভেতর ভদ্রতা, সুশীলতা, সামাজিকতা, মানবিকতা, পরোপকারীতা, সহনশীলতা, সহমর্মিতা,দূরদর্শিতা ইত্যাদি সুন্দর সুন্দর গুণাবলির বিকাশ ঘটবে৷ অবশ্যই এটা খুব তাড়াতাড়ি হবে না কিংবা প্রচন্ডভাবে দৃশ্যমান হবেনা কিন্তু পড়তে পড়তে এসব গুণ আপনার ভেতরটাকে ক্রমান্বয়ে উন্নত করতেই থাকবে।
২] ধরুন আপনি ২০০০টাকার বই কিনলেন, বইগুলোকে যদি যত্ন করে রাখতে জানেন তাহলে আপনার মৃত্যু অবধিও বইগুলোকে ভালোভাবেই রাখতে পারবেন। বইয়ের দায়িত্বে অন্য কেউ থাকলে তারাও সেগুলো সুন্দরভাবে রাখতে পারবেন। কিন্তু আপনি যদি দুই হাজার টাকার জামা কিনেন বা খাবার কিনে খান তাহলে তা কিন্তু স্থায়ী হবে না বেশিদিন বা বেশিক্ষণ।
৩] বই পড়ার ফলে আগের লেখকদের জীবনকাল, তাদের সময়কার সংস্কৃতি, কৃষ্টি, অভ্যাস, ঐতিহ্য ইত্যাদি জানার ফলে আপনি তারতম্য করতে পারবেন বর্তমান সময় এবং তখনকার সময়ের মধ্যে। এর ফলে আপনি যে প্রজন্মে আছেন সে প্রজন্মের নতুন কী, খারাপ কী তা খুব সহজেই জানতে পারবেন। প্রয়োজনে খারাপগুলো থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন।
৪] বই পড়ার কিন্তু কোনো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া নেই,, যতই বই পড়বেন ততই আপনার নিউরনের কার্যকারিতা বাড়বে, ব্যবহার বাড়বে, নতুন নতুন তথ্যের সমৃদ্ধি হবে আপনার মস্তিষ্কে। কিন্তু আপনি যদি বেশি বেশি ফোন, ল্যাপটপ, টিভি ইত্যাদির পিছনে সময় ব্যয় করেন তাহলে কিন্তু ক্ষতিকর অদৃশ্য রশ্মি আপনার চোখের, মস্তিষ্কের ক্ষতি করবে খুব দ্রুত ই।
৫] আপনি যদি ভ্রমণ পিয়াসু হন তাহলে তাতে অর্থের যেমন অনেক যোগানের দরকার হবে তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় ভ্রমণ আপনার জীবনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে, অথবা ভ্রমণের পরপর ই সেই স্মৃতি হয়তো আপনার নিউরন থেকে মুছে যাবে। কিন্তু বইয়ে পড়া ভ্রমণকাহিনীকে যদি আপনি পুরোপুরি হৃদয়ঙ্গম করতে পারেন তাহলে তাতে আপনি ভ্রমণের সমান মজা পাবেন এবং যদি ভুলেও যান বইটা বের করে পুনরায় পড়ে নিতে পারবেন।
৬] বই সেসব সঙ্গী যারা আপনাকে কাঁদাবে, হাসাবে, কৌতূহলী করবে, আবেগী করবে, ভাবালু করবে। কিন্তু কখনো আপনার সাথে প্রতারণা করবে না। আপনি যদি ৫ জন খুব ভালো বন্ধু বানান তাহলে তাদের পেছনে সময়, শ্রম, ভালোবাসা দেবার পরও তাদের থেকে প্রতারিত হবার সম্ভাবনা থাকবে, কিন্তু বই এবং বইয়ের চরিত্রগুলোকে যদি আপনি নিজের ভেতর ধারণ করতে পারেন তাহলে কখনোই আপনি প্রতারিত হবেন না।
৭] বই পড়ার প্রতি মনোযোগী হবার ফলে আশপাশের বিচ্ছিন্ন, অসামাজিক কাজ-কর্মে আপনি কান দিবেন না, চোখ দিবেন না, নিজের জীবনটাকে সব সময় সুন্দর, শুভ্রতার দিকে নিয়ে যাবার প্রতি মনোযোগী হবেন, অন্য একজন অ-পাঠক কখনোই মানুষের মনের সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলো বুঝতে পারবেনা বা মূল্যায়ন করতে পারবে না কিন্তু বই পড়ুয়া পাঠক সবসময় নিজের সূক্ষ্ণ মানসিকতার দ্বারা সবকিছুকে মূল্যায়ন করবে।
৮] বই কোনোভাবেই আপনাকে খারাপের দিকে ধাবিত করবে না, কেন বলছি শুনুন– আপনি যদি সিরিয়াল কিলিং নিয়ে একটি বই পড়তে পড়তে সিরিয়াল কিলারের প্রেমে পড়ে যান তাতেও বিশেষ সুবিধা করতে পারবেন না, কারণ সিরিয়াল কিলারের পিছনে কিন্তু একজন অসাধারণ গোযেন্দা অফিসার রয়েছেন যিনি আপনার নজর কাড়তে বাধ্য৷ শেষে গিয়ে আপনি কিন্তু কিলারের পতন এবং গোয়েন্দা অফিসারের সাফল্য ই দেখতে পাবেন, এতে আপনার শিক্ষা হবে এই ভেবে যে অপরাধী ছাড়া পায় না( অবশ্য শেষটা ব্যতিক্রম হলে এবং থ্রিলার সিরিজ হলে অন্য কথা)।
৯] বই পড়ুয়াদের কখনো আড্ডা দেয়ার জন্য টপিকের অভাব হয় না বা আবোল-তাবোল, হাস্যকর টপিক নিয়ে কথা বলে সময় নষ্ট করতে হয় না। ৪/৫ জন বই পড়ুয়া একত্র হলে দেখা যায় একজন কবিদের চরণে পুষ্পমাল্য দিচ্ছেন তো অন্য জন ঔপন্যাসিকের দফা-রফা করছেন। একজন প্রবন্ধের মাথায় টুপি পরাচ্ছেন তো অন্য জন থ্রিলার থিলিং এ মজে যাচ্ছেন। রবীন্দ্র- নজরুল, শরৎ-সমরেশ, রোকেয়া-সুফিয়া কত রকম বিতর্কের যে সূত্র উঠে আসবে তাদের মুখে তার কোনো ইয়ত্তা নেই৷ অপরদিকে অন্য অ-পাঠক লোকজন দেখবেন ফেসবুকে কে ভাইরাল হলো, কোন ভিডিও বেশি রিচ হল, কে কেমন জামা-কাপড়, সাজু-গুজু কিনলো এমন সব টপিক নিয়ে মজে আছে।
১০] সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে গ্রহণযোগ্যতা, বই পড়ুয়াদের প্রতি আশপাশের সব মানুষের এক ধরণের ভালোবাসা কাজ করে, (বিপরীত লিঙ্গে আকর্ষণ কিন্তু বাদ যাচ্ছেনা এখানে) । কারণ, প্রায় সব লোকেরা এখনো এটা বিশ্বাস করে যে যারা বেশি বেশি বই পড়ে তাদের মধ্যে কুটিলতা বা জটিলতা কম থাকে বা সুপ্ত থাকে। আমি নিজেই বই পড়ুয়াদের প্রতি খুব আকর্ষিত হই! ছেলে হোক বা মেয়ে হোক- বই পড়তে পছন্দ করে না এমনটা যদি জেনে যাই তাহলে তাদের সাথে কথা-বার্তা বলতে আমি মোটেও পছন্দ করিনা..