ফাস্ট চার্জিং কিভাবে কাজ করে

স্মার্টফোন কেনার সময় আমরা সাধারণত প্রসেসর, র‍্যাম, স্ক্রীন দেখেই কিনে থাকি। কিন্তু অন্যান্য যন্ত্রাংশের পাশাপাশি ব্যাটারি প্রযুক্তি কিন্তু খুব একটা উন্নত হয় নি। আমরা আজকাল বেশি র‍্যাম এবং পাওয়ারফুল প্রসেসর যুক্ত স্মার্টফোন ব্যবহার করলেও ব্যাটারি প্রযুক্তি কিন্তু সেই আগেরই ব্যবহার করছি। তাই বর্তমানে ব্যাটারি চার্জ করার সময় কমিয়ে এবং ব্যাটারির পাওয়ার বাড়িয়ে ব্যাটারি প্রযুক্তিকে অন্যান্য যন্ত্রাংশের সাথে সামঞ্জস্য করার জন্য স্মার্ট ফোনে বিভিন্ন ফাস্ট চার্জিং প্রযুক্তি যুক্ত করা হচ্ছে।

স্মার্টফোনের ক্ষমতা যত বাড়ছে, ব্যাটারি দীর্ঘস্থায়ীত্ব ততই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি অনেকেই এখন হালকা ও পাতলা ফোন চাচ্ছেন, কিন্তু সেখানে বড় ব্যাটারি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এই সব কিছুর একটাই সমাধান রয়েছে আর তা হলো, দ্রুত ব্যাটারি চার্জ করার জন্য কোয়ালকম কুইক চার্জ ৩.০ অথবা ইউএসবি পাওয়ার ডেলিভারি প্রযুক্তি ব্যবহার করা।

কোয়ালকমই প্রথম এই দ্রুত চার্জিং প্রযুক্তি নিয়ে এগিয়ে এসেছিল। পরবর্তীতে অনেক কোম্পানি এ ধরণের দ্রুত চার্জিং প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে ভিন্ন নামে যেমন টার্বো, র‌্যাপিড, ফাস্ট প্রভৃতি। বর্তমানে অনেক আধুনিক ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন কুইক চার্জ ৩.০ সমর্থিত, যদিও একই সঙ্গে তা ভার্সন ২.০ এবং ১.০ সমর্থন করে। কুইক চার্জ ৩.০ প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্মার্টফোনের ব্যাটারি ৩০ মিনিটের মধ্যে ০% থেকে ৫০-৬০% চার্জ হতে পারে ব্যাটারির কোন ক্ষতি করা ছাড়াই। দ্রুত চার্জিং এর জন্য এখন সর্বাধুনিক প্রযুক্তি হল ইউএসবি পাওয়ার ডেলিভারি (পিডি)। কোয়ালকম কুইক চার্জ সাধারণত কোয়ালকম এর প্রসেসর যুক্ত ফোনেই পাওয়া যায়। অপরদিকে ইউএসবি পাওয়ার ডেলিভারি একটি মুক্ত প্রযুক্তি যা একসাথে আইফোন এবং অ্যান্ড্রয়েড ফোন সমর্থন করে। বর্তমানে ইউএসবি পাওয়ার ডেলিভারি প্রযুক্তি যুক্ত ডিভাইস এর সংখ্যা কম হলেও ভবিষ্যতে সবধরণের ডিভাইস ইউএসবি পাওয়ার ডেলিভারি প্রযুক্তি থাকবে। জেনে অবাক হবেন যে, একই ইউএসবি পাওয়ার ডেলিভারি প্রযুক্তির পাওয়ার ব্যাংক/ চার্জার দিয়ে ফোন এবং ল্যাপটপ কম্পিউটার চার্জ দেয়া যায়!

আমরা এখানে চেষ্টা করবো ফাস্ট চার্জিং টেকনোলজি কিভাবে কাজ করে এবং বর্তমানে প্রচলিত কোয়ালকম কুইক চার্জ ৩.০ এবং ইউএসবি পাওয়ার ডেলিভারি সুবিধা নিয়ে আলোচনা করার।

বুঝার সুবিধার্থে প্রথমে ভোল্ট, এম্পেয়ার এবং ওয়াট সম্পর্কে জেনে নেয়া ভালো। ভোল্টেজ এর একক ভোল্ট, কারেন্ট এর একক এম্পেয়ার এবং ইলেক্ট্রিক্যাল পাওয়ার এর একক ওয়াট। এই ইলেক্ট্রিক্যাল সিস্টেম কে পাইপ দিয়ে পানির প্রবাহের সাথে তুলনা করা যায়। সেক্ষেত্রে ভোল্টেজ হবে পাইপ এ পানির প্রেসার বা চাপ, কারেন্ট হবে পানির প্রবাহ এবং ইলেক্ট্রিক্যাল পাওয়ার হবে নির্দিষ্ট সময় পর পাইপ দিয়ে প্রবাহিত মোট পানির পরিমাণ।

স্মার্টফোনের ব্যাটারির মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হলে ব্যাটারি চার্জ হয়। এখন এম্পেয়ার/ কারেন্ট এবং ভোল্টেজ/ ভোল্ট যত বেশি হবে ব্যাটারি তত দ্রুত চার্জ হবে। বিভিন্ন প্রকার ব্যাটারির জন্য কারেন্ট এবং ভোল্টেজ এর একটি নির্দিষ্ট নিরাপদ সীমা আছে যেটা চার্জ কন্ট্রোলার নিয়ন্ত্রণ করে। চার্জ কন্ট্রোলার চিপ ফোনের ব্যাটারির চার্জিং এবং ডিসচার্জিং কারেন্ট এবং ভোল্টেজ নিয়ন্ত্রণ করে নিরাপদ সীমার মধ্যে রাখে। একটি সাধারণ ইউএসবি চার্জার চার্জ দেয়ার সময় সর্বোচ্চ ১ এম্পেয়ার কারেন্ট সরবরাহ করতে ৫ ভোল্টে, অর্থাৎ সর্বমোট পাওয়ার আউটপুট দিতে পারে ৫ ভোল্ট x ১ এম্পেয়ার = ৫ ওয়াট। এখন ফাস্ট চার্জিং প্রযুক্তির চার্জার পাওয়ার আউটপুট অর্থাৎ ওয়াট বাড়িয়ে দ্রুত চার্জ দেয়। চার্জার এর ওয়াট রেটিং যত বেশী হবে চার্জার তত দ্রুত ডিভাইস চার্জ দিতে পারবে। ফোনের জন্য তৈরি ফাস্ট চার্জার গুলো সাধারণত ৫ ভোল্ট x ২ এম্পেয়ার = ১০ ওয়াট / ৯ ভোল্ট x ২ এম্পেয়ার = ১৮ ওয়াট / ১২ ভোল্ট x ১.৫ এম্পেয়ার = ১৮ ওয়াট অর্থাৎ ১০ থেকে ১৮ ওয়াট পর্যন্ত পাওয়ার আউটপুট দিতে পারে।

স্মার্টফোন এর ব্যাটারি ০% থেকে ১০০% পর্যন্ত একই গতিতে চার্জ হয় না। আপনি হয়তো লক্ষ্য করলে দেখবেন যে আপনার ডিভাইস শুরুতে অনেক দ্রুত চার্জ হয়, কিন্তু ডিভাইসটি ৫০% বা তার বেশি চার্জ হয়ে যাওয়ার পরে চার্জ হওয়ার গতি কমতে থাকে এবং শেষ ১০% চার্জ হতে সবচেয়ে বেশী সময় লাগে। স্মার্টফোনে ব্যবহৃত লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির চার্জিং সিস্টেমকে ব্যাগ বা লাগেজে জিনিসপত্র রাখার সাথে তুলনা করা যায়। লাগেজ যত ভর্তি হতে থাকে আমাদের জিনিসপত্র রাখতে তত কসরত করতে হয়। ঠিক এমনভাবে আপনার ফোনটি যখন চার্জ হতে শুরু করে তখন ব্যাটারিটি একদম খালি থাকায় অনেক দ্রুত চার্জ গ্রহণ করে। চার্জ এর % বাড়তে থাকলে ব্যাটারিটির চার্জের গতি কমে যায় ৯০% এর পরে ব্যাটারি চার্জ গ্রহণ করা আরও কমিয়ে দেয়।

দ্রুত চার্জিং প্রযুক্তি গুলোতে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি তার বৈশিষ্ট অনুযায়ী চার্জ হয়। যেমন ব্যাটারি ০% থেকে ৫০% পর্যন্ত ১৮ ওয়াট পাওয়ারে চার্জ হয়, কারণ তখন ব্যাটারিটি বেশি পাওয়ার গ্রহণ করতে পারে। তারপর ব্যাটারির ৫০% এর পরে কম পাওয়ারে চার্জ হতে থাকে। এজন্য দ্রুত চার্জিং প্রযুক্তিতে ব্যাটারি চার্জ ০% থেকে ৫০% এ উন্নীত হতে সবচেয়ে কম সময় লাগে।

ফাস্ট/কুইক চার্জিং প্রযুক্তি নিয়ে কিছু ভুল ধারণা অনেকের মাঝে আছে, এ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জেনে নেয়া যাক

১) অনেকে মনে করেন যে, ফাস্ট চার্জার ব্যবহার করলে ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যাবে। এটি একদম ভুল ধারণা। ফাস্ট চার্জার কখনো আপনার ফোনে জোর করে বেশি ভোল্ট অথবা এম্পেয়ারে চার্জ দিবে না। এটি ব্যাটারির লেভেল এবং ফোনে থাকা চার্জ কন্ট্রোলারের নিয়ম অনুসারেই চার্জ করবে।

২) অনেকে মনে করেন যে, ফাস্ট চার্জার ব্যবহার করলে আপনার ফোনে দ্রুত চার্জিং শুরু হয়ে যাবে। আসলে আপনার ফোন যদি ফাস্ট চার্জিং প্রযুক্তি সমর্থন করে তাহলে আপনি ফাস্ট চার্জার ব্যবহার করে দ্রুত ফোন চার্জ করতে পারবেন। আর তা না হলে ফাস্ট চার্জার এর কোনো সুফল আপনি পাবেন না। আবার অনেকে মনে করেন যে, আপনার ফোন ফাস্ট/কুইক চার্জিং সমর্থন করে তাই সাধারণ চার্জার ব্যবহার করলে ব্যাটারির সমস্যা দেখা দেবে। আসলে এটাও ঠিক নয়। আপনি যেকোনো ভালো মানের সাধারণ চার্জার ব্যবহার করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে ফোনটি চার্জ হতে বেশি সময় লাগবে।

৩) অনেকে মনে করেন যে, ফোন এর জন্য ফাস্ট চার্জার কিনতে হলে ফোনের ব্র্যান্ড এর সাথে মিল রেখে চার্জার কিনতে হবে। বর্তমান বাজারে অনেক ব্র্যান্ড এর ফাস্ট চার্জার কিনতে পাওয়া যায়। যেমন অনেক তৃতীয় পক্ষ কোম্পানি কোয়ালকম কুইক চার্জার বানিয়ে থাকে যারা কোয়ালকম থেকে প্রযুক্তি নিয়ে নিজেরা বানায়। আপনি যেকোনো ভালো মানের কুইক/ফাস্ট চার্জার ব্যবহার করেই দ্রুত চার্জিং প্রযুক্তির সুবিধা নিতে পারবেন।