ট্রান্সফরমার তৈরির সূত্র

ট্রান্সফরমার কি ?

 ট্রান্সফরমার এমন একটি ইলেক্ট্রনিক/ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্র যেটি ইনপুট হিসেবে ইলেক্ট্রিক পাওয়ার নিয়ে আউটপুটেও ইলেকট্রিক পাওয়ার দিবে, কিন্তু এদের মধ্যে কোন তারের সংযোগ থাকবে না। তাত্ত্বিক ভাবে বলতে গেলে বলতে হবে, ” ট্রান্সফরমার এমন একটি স্থির যন্ত্র বিশেষ যেখানে কারেন্টের সাপেক্ষে, এসি সাপ্লাই এর ভোল্টেজ বাড়ানো হয় নয়ত কমানো হয়” ।

এটি (ট্রান্সফরমার) একটি বৈদ্যুতিক স্থির যন্ত্র অথবা ডিভাইস, যার দ্বারা ফ্রিকুয়েন্সী এবং পাওয়ার এর কোন প্রকার পরিবর্তন না করে বৈদ্যুতিক সংযোগ ছাড়া চুম্বকীয় ভাবে সংযুক্ত ২টা কয়েলে প্রয়োজন অনুসারে ভোল্টেজ বাড়িয়ে অথবা কমিয়ে একটা সার্কিট হতে অন্য সার্কিটে পাওয়ার স্থানান্তরিত করা হয় তাকেই ট্রান্সফরমার বলে ।

ট্রান্সফরমার কেন ব্যবহার করা হয়

ধরুন পাওয়ার স্টেশন থেকে আপনার বাসা অনেক দূরে। তখন আপনি যদি আপনার প্রয়োজনীয় ভোল্টেজ পেতে চান তাহলে সেখানে একটি স্টেপআপ ট্রান্সফরমার দিয়ে বাড়িয়ে তা দূরবর্তী স্থানে যেখানে আপনার বাসা অবস্থিত, সেখানে সঞ্চালিত করা হয়। আবার, আপনার বাসায় এসি লাইন দিয়ে সরাসরি শখের প্রজেক্ট কিংবা সার্কিট কিংবা জরুরী ব্যবহার্য্য টিভি, ডিভিডি, টর্চ, চার্জ লাইট ইত্যাদি কে কখনই চালাতে পারবেন না। প্রথমে আপনাকে অবশ্যই মেইন লাইনের ভোল্টেজ কে কমিয়ে উক্ত সার্কিট বা যন্ত্রের উপযুক্ত করতে হবে। আর এই কাজটিই করে থাকে ট্রান্সফরমার।

ট্রান্সফরমার এর গঠন

ট্রান্সফরমার মূলত নিম্নোক্ত জিনিস গুলো দ্বারা তৈরি হয়।

১। প্রাইমারী কয়েল
২। সেকেন্ডারী কয়েল ও
৩। ম্যাগনেটিক কোর
এছাড়াও প্রকারভেদ ও প্রয়োজন ও নিরাপত্তা অনুসারে আরো বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

ট্রান্সফরমার কিভাবে কাজ করে

এটাকে বলা হয় মিউচুয়াল ইন্ডাকশন । অর্থাৎ প্রাইমারী কয়েলে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করলে এর চার পাশে একটি ম্যাগনেটিক ফিল্ড বা তড়িৎ চুম্বকীয় আবেশের সৃষ্টি হয়। আর এই ফিল্ড থেকে ফ্লাক্স সংগ্রহ করে সেকেন্ডারী কয়েল। তখন তাদের মধ্যে একটি মিউচুয়াল/কমন ইন্ডাকশন এর তৈরি হয়। যার ফলে সেকেন্ডারীতে তড়িৎ প্রবাহিত হয়। এই প্রবাহিত তড়িৎ এর মান নির্ভর করে সেকেন্ডারী ও প্রাইমারী তে ব্যবহৃত প্যাঁচ সংখ্যার উপরে। যাকে বলে ট্রান্সফরমেশন রেশিও ।

ট্রান্সফরমার এর ক্ষমতার একক কি এবং কেন ?

ট্রান্সফরমারের ক্ষমতার একক কেভিএ ( KVA )। অর্থাৎ কিলোওয়াট ভোল্ট এম্পিয়ার। কারণটা হল, আমরা জানি যেকোন মেশিনের ক্ষমতার একক নির্ধারণ করা হয় তার লস এর উপর ভিত্তি করে। এখানেও ঠিক একই বিষয়। ট্রান্সফরমারের লস গুলো হল
১। আয়রন লস/কোর লস
২। কপার লস
আচ্ছা, তো এখন আয়রন লস মানেই ভোল্টেজ এর ব্যাপার, আর কপার লস মানেই কারেন্ট এর লস। তাহলে মোটের উপর দাঁড়াল ভোল্ট এম্পিয়ার। এ জন্যেই ট্রান্সফরমার এর ক্ষমতার একক হিসেবে কিলোওয়াট ভোল্ট এম্পিয়ার বা কেভিএ লেখা হয়ে থাকে।

ট্রান্সফরমার এর প্রকারভেদ

কার্যকারীতার উপর নির্ভর করে ট্রান্সফরমার কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়ঃ

১. স্টেপ আপ  ট্রান্সফরমার

২.স্টেপ ডাউন ট্রান্সফরমার

স্টেপ আপ  ট্রান্সফরমার

যে ট্রান্সফরমারের প্রাইমারীতে ভোল্টেজ দিলে সেকেন্ডারীতে উচ্চ ভোল্টেজ পাওয়া যায় তাকে স্টেপ আপ ট্রান্সফরমার বলে। আমরা ইউপিএস, আইপিএস , ইনভার্টার প্রভৃতি যন্ত্রপাতিতে যে ট্রান্সফরমার ব্যবহার করে থাকি সেগুলো স্টেপআপ প্রকৃতির ট্রান্সফরমার।

স্টেপ ডাউন  ট্রান্সফরমার

যে ট্রান্সফরমার এর প্রাইমারীতে ভোল্টেজ দিলে সেকেন্ডারীতে অপেক্ষাকৃত নিম্ন ভোল্টেজ পাওয়া যায় তাকে স্টেপ ডাউন ট্রান্সফরমার বলে। বেশীরভাগ ঘরের যন্ত্রপাতি যা আমরা ব্যবহার করি সেগুলোর ভেতরে স্টেপ ডাউন ট্রান্সফরমারই ব্যবহার করা হয়।

ট্রান্সফরমার তৈরির সূত্র

১০০০ ওয়াটের জন্য।
৫০-০-৫০ ভোল্ট ও ২০ অ্যাম্পিয়ার
৫০×২০=১০০০ ওয়াট।

আমরা ট্রান্সফরমার তৈরির জন্য কোর সাইজ বের করব।
ধরুন কোরের ওয়াটের জন্য কোর নির্ণয় করব।

ধরি,
কোরের সাইজঃ ৭.৬২×৫.০৮=৩৮.৭০ cmক্ষেত্রফল ।

কোরের সূত্রঃ (কোরের ক্ষেত্রফল÷১.১৫)2
বা, (৩৮.৭০÷১.১৫)২
বা, =১১৩২ ওয়াট
ধরি,
কোর এর ক্ষেত্রফল = ৭.৬২×৫.০৮=৩৮.৭০ সে মিঃ
তাহলে,
৪২/৩৮.৭০= ১.০৮৫ প্যাচ।
প্রতি ভোল্ট এর জন্য ১.০৮৫ প্যাচ দিতে হবে ।

তাহলে,
প্রাইমারী,২২০ ভোল্ট এর জন্য প্যাচ সংখ্যা হবে।
২২০×১.০৮৫= ২৩৯ প্যাচ ।

সেকেন্ডারি,
৫০-০ -৫০ ভোল্ট।
বা, ৫০×১.০৮৫= ৫৪.২৫=>৫৫ প্যাচ ডাবল দিতে হবে।

ওয়াট এর উপর অ্যাম্পিয়ার ও গেজ নির্ণয় করতে হবে

এইভাবে আমরা ট্রান্সফরমার তৈরির করতে পারি।

আমরা ট্রান্সফরমার এর গেজ নির্ণয় করব।

ধরি,
৫০-০-৫০ ভোল্ট, ও ২০ অ্যাম্পিয়ার।
আমরা জানি, P or W= ভোল্ট ×অ্যাম্পিয়ার
তাহলে ওয়াট =৫০×২০=১০০০ ।

এখন আমরা প্রাইমারি এর গেজ নির্বাচন করব।

=১০০০/২২০=৪.৫৪ অ্যাম্পিয়ার ।
এখন দেখতে ৪.৫৪ অ্যাম্পিয়ার লোড নিবে কত নং গেজ, নিচের লিষ্ট থেকে খুঁজে বের করতে হবে ।
আমরা দেখতে পাচ্ছি ১৬ নং গেজ সিলেক্ট করতে হবে ।
যেহেতু ১৭ নং গেজ ৪.১৮ অ্যাম্পিয়ার বহন করে। ৪.১৮<৪.৫৪ আমরা বেশি অ্যাম্পিয়ার গেজ নির্বাচন করব ।

আর সেকেন্ডারি তে তো ২০ অ্যাম্পিয়ার দেওয়া আছে, একই ভাবে নির্বাচন করব।

আমরা ওয়্যার এর ডায়া বের করব।
সূত্রঃ,
D=root over i÷2
=> root over ৪.৫৪÷২
=> ১.৫০ mm

Wire এর ওজন বের করব।
ক্ষেত্রফল ছিল,
৭.৬২×৫.০৮ cm.
তাহলে,(৭.৬২×২+৫.০৮×২)= ২৫.৪ cm. প্রতি প্যাচ এ।
প্রাইমারীতে প্যাচ সংখ্যা।
২৩৯×২৫.৪=৬০৭০.৬ cm.
cm কে m করব।
৬০৭০.৬÷১০০= ৬০.৭ m.

ওজন এর সূত্রঃ
তামার জন্য।
=> D2×L (m)×০.০০৭
=> (১.৫০)2×৬০.৭×০.০০৭
=>=০.৯৫ =>১ কেজি।
তাহলে প্রাইমারীতে ১ কেজি তামা লাগবে।

সেকেন্ডারীতে একইভাবে বের করবেন।
২০ অ্যাম্পিয়ার এর জন্য ১০ অ্যাম্পিয়ার গেজ নির্বাচন করবেন।
১০+১০=২০
এভাবে আপনি যে কোন, ভোল্ট ও অ্যাম্পিয়ারের ট্রান্সফরমার বানাতে পারবেন।

সংগৃহীত